আজ || রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
শিরোনাম :
  গোপালপুরে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা       ধনবাড়ি মডেল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদ ও দোয়া       গোপালপুরে মরহুম আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট       টাঙ্গাইল-২ আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী শাকিল উজ্জামান       গোপালপুরে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ       গোপালপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন সালাম পিন্টু       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ       গোপালপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই শহীদ দিবস পালিত       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল       গোপালপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় ১২ মামলার আসামি চাকমা জাহাঙ্গীর নিহত    
 


কণ্যা সন্তান প্রসব করায় ঘর ভাঙ্গলো কিশোরী মর্জিনার; বিচারের আশায় ঘুরছে দ্বারে দ্বারে

Untitled-1 copy

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কিশোরী মর্জিনা। বয়স ১৬। বাবা দিন মজুর মোবারক হোসেন। বাড়ি মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ি ইউনিয়নের কুড়িপাখি গ্রামে। অষ্টম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় অভাবগ্রস্ত পিতা স্কুল পড়–য়া কণ্যাকে বিয়ে দিয়ে দায়গ্রস্থতা এড়াতে চেয়েছিল। শেষ সম্বল বাড়ি ভিটে সংলগ্ন এক টুকরো জমি বিক্রির সমুদয় টাকা যৌতুক দিয়ে কণ্যার মুখে হাসির রেখা দেখতে চেয়েছিল। মর্জিনার স্বামী মোহাম্মদ শাহজাহান। পেশায় দর্জি। হিরণ বাজারে কাপড়ের দোকান। পিতা আব্দুল মোতালেব। গ্রাম মির্জাবাড়ি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাড়ি। বিয়ে হয় ২০১২ সালের ১২ জুন। যৌতুকের পরিমান নগদ ও স্বর্ণ মিলিয়ে এক লক্ষ টাকা। বিয়ের পর ৬/৭ মাস ভালোই যাচ্ছিল। বছর না গড়াতেই শাহজাহান বদলে যেতে থাকে। নানাছুঁতায় নতুন করে যৌতুকের দাবি তোলে। বেগ পেলেও দুই বারে হাজার চল্লিশেক টাকা পরিশোধ করা হয়। তবু ও আশা মেয়েটা যদি তাতে সুখে থাকে। বছর ঘুরতেই মর্জিনা সন্তান ধারন করে। শাহজাহান বায়না ধরে ছেলে চাই। এজন্য সন্তান জন্ম নেয়ার পূর্বেই মর্জিনার মনে নানা শঙ্কা ভর করে। কারণ স্বামীর সাথে সুর মিলিয়ে শ্বশুর বাড়ির সবাই তাকে আগেভাগে সতর্ক করে দেয় তারা ছেলে সন্তান চায়। কিন্তু বিধি বাম। গত ৭ ফেব্রুয়ারি মর্জিনা কণ্যা সন্তান প্রসব করে। ক্ষুব্দ হয় শাহজাজান ও পরিবারের লোকজন। আতুড় ঘরেই পেটানো শুরু। এর পর শুধুই নির্যাতনের পালা। বাবার বাড়ি আশ্রয় নিল মর্জিনা। শরীরের অবস্থা কাহিল। নবজাতক বুকের দুধ পায়না। মর্জিনার বাবা মোবারক মেয়েকে চারটে খেতে দিতে পারলেও নবজাতককে নিয়ে পড়ে ফ্যাসাদে। শেষ পর্যন্ত অনেকটা হাতেপায়ে ধরেই মেয়েকে নবজাতকসহ শ্বশুরবাড়ি পাঠায়। এ যেন জমের বাড়ি গমন। নির্যাতনের মাত্রা সীমা ছেড়ে যায়। শাহজাহান এর মধ্যে পড়শি এক প্রবাসির স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় লিপÍ হয়। মর্জিনা এর প্রতিবাদ করলে নির্যাতনের মাত্রা নতুন রুপ পায়। মর্জিনা পূর্বাকাশকে জানায়, ‘দিনে মারপিট করায় যন্ত্রনা নিয়ে রাতে ঘুমাতে পারতাম না। আর শাহাজাহান সারা রাত জেগে ঐ প্রবাসির স্ত্রীর সাথে মোবাইলে প্রেমালাপে লিপ্ত থাকতো। সব নির্যাতন সহ্য করে শুধুমাত্র নবজাতক সুমির মুখের দিকে তাকিয়ে স্বামীর বাড়ি থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে অনেকটা জোরাজুরি করে আমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। সব শেষে গত ২৩ ডিসেম্বর শাহজাহান টাঙ্গাইল নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তালাকনামার কাগজপত্র আমার বাবার বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়।’ মর্জিনার অভিযোগ, ‘তার বাবা খুবই গরীব। দুইভাই এক বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। সর্বস্ব বিলিয়ে বাবা আমাকে বিয়ে দিয়েছিল। কারণ আমি সুখে থাকি এটাই তার একমাত্র কাম্য ছিল। কিন্তু মেয়ে সন্তান প্রসব করায় আমার কপাল ভেঙ্গেছে। সংসার ভেঙ্গেছে। কিন্তু এতে আমার কি দোষ ছিল?। আদালতে মামলা করার আর্থিক সামর্থ বাবার নাই। তাই স্থানীয়ভাবে সালিশ করে ফয়সালা চাইতে গ্রাম্য মাতুব্বর ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বরস্থ হয়ে ঘুরছি। জানিনা বিচার পাবো কিনা।’ মর্জিনার বাবা মোবারক হোসেন জানান,‘ভাইরে আমি একদম গরীব মানুষ। আমার মেয়ের জীবনটা ধংস করে দিছে। মামলামোকদ্দমার মাধ্যমে ফয়সালা পাওয়ার সামর্থ্য নাই। গ্রাম্য সালিশে ও বিচার পাই নাই। তাই মধুপুর উপজেলার একটি মানবাধিকার সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছি। তারা আমাকে সুবিচার পাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতার কথা বলেছেন।’ মানবাধিকার সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধি সার্জেন্ট (অবঃ) গোলাম কিবরিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এক বিংশ শতাব্দীতে এখনো মেয়ে সন্তান প্রসব করার অভিযোগে স্ত্রীকে তালাক দেয়া হয় শুনতেই অবাক লাগে। স্বামী শাহজাহান একটা লম্পট। নিরীহ স্ত্রীকে বিনাদোষে তালাক দিয়ে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত রয়েছে বলে এলাকাবাসী তাকে জানিয়েছেন। সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য শাহজাহানকে সংস্থা তিন তিনবার নোটিশ করেছে। শাহজাহান তাতে দেয়নি। মর্জিনা যাতে বিনা খরচায় আইনী সহায়তা পায় সে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান জনাব কিবরিয়া। এ ব্যাপারে শাহাজাহানের সাথে যোগাযোগ করলে প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, কণ্যা সন্তান প্রসবের জন্য নয়- আচারআচরণ সন্তোষজনক না হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। এটি দেয়ার অধিকার একজন পুরুষ হিসাবে তার রয়েছে।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!